
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলও ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিলে আমরা রাজা হবো না মানুষকে প্রজা বানাবো না। আমরা হবো বাংলাদেশের মানুষের সেবক, খেদমত করাই আমাদের কাজ। রাষ্ট্র পরিচালনায় আমরা ইসলামকে বসাবো, আমরা বসবো না। আমাদের এক নম্বর অগ্রাধিকার দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়া।
মঙ্গলবার (১০জুন’২৫) সকালে টাঙ্গাইল শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জামায়াতের এক প্রীতি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা বলেছিলাম অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছও নিরপেক্ষ অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন অনেকেরই পরিকল্পনা আওয়ামী স্টাইলে নির্বাচন। তাহলে এত মানুষের জীবন দেয়ার কী প্রয়োজন ছিলো। জন্য মানুষ জীবন ও রক্ত দিয়েছে সুস্থ রাজনীতির জন্য সুস্থ রাজনীতির জন্য অবশ্যই প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে।
গ্রামে গঞ্জে শহরে নগরে বন্দরে চা স্টল থেকে সচিবালয়ে মানুষের মুখে মুখে আলোচনা সব দল দেখা শেষ এবার দেখব জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। দেশের মানুষ ইসলামের পক্ষে রায় দিলে বাংলাদেশে আর কোন চাঁদাবাজ সন্ত্রাস নৈরাজ্যবাদ, দুর্নীতিবাজ দখলদারদের জায়গা হবে না। আর কোন ফ্যাসিবাদ কায়েম হবে না।
ফ্যাসিবাদ সরকার মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে আয়না ঘর তৈরি করেছে গুম করেছে খুন করেছে। তারা বিচার ও নির্বাচন ব্যবস্থা তারা ধ্বংস করেছে। প্রধান বিচারপতি সহ সকল বিচারপতি পালিয়ে যায় এমন কথা দুনিয়া এর আগে কখনো শুনেন নাই ।
এ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছি কিন্তু সফল হতে পারেনি। ছাত্র সমাজের নেতৃত্বে কোটা বিরোধী আন্দোলন সফল হলো কৃষক শ্রমিক পেশাজীবী ব্যবসায়ী শিক্ষক রাজনীতিবিদ সকলের অংশগ্রহণে। জুলাই বিপ্লবে গণহত্যায় জড়িত সকলের বিচার করতে হবে। বিচার দৃশ্যমান করতে হবে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েমের সকল সহযোগীদেরও বিচার করতে হবে।
দেশের মানুষ এদের বিচার চায়। পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে হবে। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনে লগি বৈঠা হত্যাকাণ্ড ও ওয়ান ইলিভেনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমের যাত্রা শুরু হয়েছিলো। চারদলীয় জোট সরকারি জামাতের দুজন মন্ত্রীর মন্ত্রণালয় পরিচালনা দুর্নীতি মুক্তমন্তিত যোগ্যতা সততা ও স্বচ্ছতা গোটা জাতির দৃষ্টি আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছিল।
আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র যারা বাংলাদেশকে সবসময়ই করদরাজ্য হিসেবে ব্যবহার করতে চায় তারা তখন থেকেই এ দেশের বিরুদ্ধে, ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে, দেশের মানুষের বিরুদ্ধে একটার পর একটা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচন ছিল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ত্রিপক্ষীয় ষড়যন্ত্রের নির্বাচন। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’, আওয়ামী লীগ ও মইনুদ্দিন ফখরুদ্দিনদের ত্রিপক্ষীয় সমঝোতার ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়েই আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় আনা হয়েছিল।
ক্ষমতায় আসার পরই তারা ইসলামও জামাতে ইসলামীকে টার্গেট করেছিল। এর অংশ হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর আমীরসহ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে মিথ্যা সাক্ষী, প্রসিডিউটর, তদন্ত কর্মকর্তা, বিচারপতি নিয়োগে করে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে ফাঁসি দিয়ে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এটিএম আজহারুল ইসলামের বেকসুর খালাস পর মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে এ বিচার প্রক্রিয়া ন্যায় ভ্রষ্ট ও হত্যাকাণ্ড ছিলো। ও আন্তর্জাতিক কোন মানদন্ড মানা হয়নি বলা হয়েছে আগের মামলাগুলো রায় ছিল ন্যায় ব্রষ্ট এটিএম আজহারুল ইসলামের রায়ে সুপ্রিম কোর্টের ফুল ব্যাঞ্চের পর্যবেক্ষণে আগের মামলাগুলো রায় ছিল ন্যায় ভ্রষ্ট। সেগুলোতেও আন্তর্জাতিক কোন মানদন্ড মানা হয়নি।
তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সিনহা বলেছিলেন আপনাদের যুক্তি-তর্ক সাক্ষ্য প্রমাণ কোন কিছুতেই নিজামী সাহেবকে একদিনের সাজা দেয়া যায় না। এতে এটাই প্রমাণিত হয় এ সকল রায় অন্য কোথাও লেখে আদালতে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। অন্তরবর্তী সরকারকে আহ্বান জানাই এ বিচার প্রক্রিয়ায় জড়িত সকলকেই আইনের আওতায় আনতে হবে। এই খুনি হত্যাকারীদের বিচার করতে হবে এদের কোনও ক্ষমা নাই।
টাঙ্গাইল জেলা জামায়াত আয়োজিত প্রীতি সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও টাঙ্গাইল জেলা জামায়াতের আমীর আহসান হাবীব মাসুদ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতের জামালপুর জেলা আমীরও কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য মাওলানা আব্দুস সাত্তার, নাটোরের জেলা আমিরও কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ড. মীর নূরুল ইসলাম এবং শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় বিদেশ বিষয়ক সম্পাদকও ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতের মজলিশে শুরা সদস্য ড. আহসান হাবীব ইমরোজ। সঞ্চালনায় ছিলেন জামায়াতের জেলা সেক্রেটারি মো. হুমায়ুন কবির।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিবিরের সাবেক জেলা সভাপতি মুহাম্মদ ময়েজ উদ্দিন, প্রফেসর ডা: রুহুল আমিন, জেলা জামায়াতের নায়েব আমির অধ্যাপক খন্দকার আব্দুর রাজ্জাক, তানযীমুল উম্মাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হাবীবুল্লাহ মুহাম্মদ ইকবাল, আব্দুল্লাহ আল নোমান, মুজাহিদুল ইসলাম, এডভোকেট শাফিউল আলম, শিবিরের জেলা সেক্রেটারি আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ।