Dhaka 8:17 am, Friday, 18 July 2025

শেষ হয়নি ৭ কোটি টাকার কাজ, লাপাত্তা ঠিকাদার

Oplus_131072

জয়পুরহাটের তিন উপজেলার তিনটি হাটে ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সুবিধার্থে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ভবন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ সাড়ে চার বছরেও শেষ হয়নি। তিন দফা মেয়াদ বাড়িয়েও প্রকল্প অসম্পন্ন রেখে লাপাত্তা হয়েছেন ঠিকাদার। এতে হাটে জায়গা সংকটে দুর্ভোগে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। উন্মুক্ত স্থান ও গাছতলায় পণ্য কেনাবেচা করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

এলজিইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিপত্র বাতিল করা হয়েছে। নতুন ঠিকাদার নিয়োগের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আক্কেলপুরের রায়কালী, কালাইয়ের হারুল্লা ও ক্ষেতলাল উপজেলার লালাগড় হাটে নতুন ভবন নির্মাণে গ্রামীণ হাট-বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) দরপত্র আহ্বান করে। ২ কোটি ৬৪ লাখ ৭৯ হাজার টাকায় রায়কালী, সমপরিমাণ অর্থে লালাগড় এবং ১ কোটি ৭৪ লাখ ২১ হাজার ১৮২ টাকার চুক্তি মূল্যে তিনটি হাটে ভবন নির্মাণে মণ্ডল ট্রেডার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চুক্তিবদ্ধ হয়। ২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর তৎকালীন জয়পুরহাট-২ আসনের সাংসদ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ভবনগুলোর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। চুক্তি অনুযায়ী ২০২২ সালের ২৯ জুন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।

পরবর্তী সময়ে ঠিকাদারের অনুরোধে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ ৩ দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর প্রকল্পের কাজ শেষ করতে নির্দেশ দেয়। কাজ শেষ না করে গত বছরের মার্চ মাসে লাপাত্তা হন ঠিকাদার। ভবনগুলোর কাজ শেষ করার জন্য এলজিইডি থেকে বারবার ঠিকাদারকে তাগাদা দেওয়া হলেও সাড়া দিচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটি। তিনটি হাটে গড়ে ৩৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

গত শনি ও রোববার হাটে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি হাটে প্রায় ৭০ শতাংশ জায়গাজুড়ে নির্মাণাধীন ভবনে আরসিসি পিলার দাঁড়িয়ে আছে। কোথাও একতলায় ছাদ এবং দ্বিতীয় তলায় পিলার আছে। রডগুলোতে মরিচা ধরেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাউকে প্রকল্প সাইটে পাওয়া যায়নি।

রায়কালী হাটের চাল ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান

তিন উপজেলায় হাটে ভবন নির্মাণ

সাড়ে চার বছরে প্রকল্পের অগ্রগতি ৩৮ শতাংশ

উন্মুক্ত স্থান ও গাছতলায় বসছেন ব্যবসায়ীরা

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার হারুঞ্জা হাটে অসম্পন্ন একটি মার্কেট ভবন

বলেন, শুরু থেকে ঠিক মতো কাজ করেননি ঠিকাদার। একদিন কাজ করলে এক মাস বন্ধ ছিল কাজ। জায়গার অভাবে অনেকে হাটের বাইরে বটতলাতে দোকান বসাচ্ছেন। আগের চেয়ে হাটে লোকজনের সমাগম কম। বেচাকেনাও কমে গেছে। নিয়মিত লোকসান গুনতে হচ্ছে।

লালাগড় হাটের মুদি দোকানি আহসান হাবিব বলেন, হাটে দোকান বসাতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বৃষ্টি হলেই দোকানদাররা দৌড়াদৌড়ি করে। রোদে গা পুড়ে যায়। জায়গা নেই তো কী হয়েছে, ইজারাদার ঠিকই খাজনা আদায় করছেন। মার্কেট নির্মাণকাজ বন্ধ থাকলেও দেখার যেন কেউ নেই।

রায়কালী হাটের ইজারাদার রাশেদুজ্জামান জানান, হাটের বেশির ভাগ জায়গায় ভবন নির্মাণের কাজ কচ্ছপগতিতে চলেছে। এখন সম্পূর্ণ বন্ধ আছে। বর্ষা মৌসুমে কাদাপানিতে একাকার হয়ে কেনাকাটা করতে হবে জনসাধারণকে।

হারুঞ্জা হাটের ইজারাদার বজলুর রহমান বলেন, এমনিতেই হাটের জায়গা নেই। কয়েক বছর ধরে ধীরগতিতে চলছে নতুন ভবনের কাজ। এতে ক্রেতা-বিক্রেতারা ভোগান্তির মুখে পড়েছেন। খাজনা আদায়ে গেলে ব্যবসায়ীদের গালি শুনতে হচ্ছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মণ্ডল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর আলমের ভাষ্য, দফায় দফায় নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ার কারণে মূলত কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। এ প্রকল্পের তাঁর অনেক লোকসান হয়েছে। এলজিইডি যে কোনো সিদ্ধান্তে তাঁর কোনো আপত্তি নেই।

এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ আলম জানান, বারবার নোটিশ দেওয়া সত্ত্বেও কাজের অগ্রগতি নেই। ঠিকাদারের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছিল তা বাতিল করা হয়েছে। এখন আবার টেন্ডার করে নতুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আওতায় প্রকল্পের কাজ শেষ করার সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বরেন্দ্র সচেতন সমাজ’র উদ্যোগে মাসব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন

শেষ হয়নি ৭ কোটি টাকার কাজ, লাপাত্তা ঠিকাদার

Update Time : 01:46:32 pm, Tuesday, 6 May 2025

জয়পুরহাটের তিন উপজেলার তিনটি হাটে ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সুবিধার্থে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ভবন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ সাড়ে চার বছরেও শেষ হয়নি। তিন দফা মেয়াদ বাড়িয়েও প্রকল্প অসম্পন্ন রেখে লাপাত্তা হয়েছেন ঠিকাদার। এতে হাটে জায়গা সংকটে দুর্ভোগে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। উন্মুক্ত স্থান ও গাছতলায় পণ্য কেনাবেচা করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

এলজিইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিপত্র বাতিল করা হয়েছে। নতুন ঠিকাদার নিয়োগের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আক্কেলপুরের রায়কালী, কালাইয়ের হারুল্লা ও ক্ষেতলাল উপজেলার লালাগড় হাটে নতুন ভবন নির্মাণে গ্রামীণ হাট-বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) দরপত্র আহ্বান করে। ২ কোটি ৬৪ লাখ ৭৯ হাজার টাকায় রায়কালী, সমপরিমাণ অর্থে লালাগড় এবং ১ কোটি ৭৪ লাখ ২১ হাজার ১৮২ টাকার চুক্তি মূল্যে তিনটি হাটে ভবন নির্মাণে মণ্ডল ট্রেডার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চুক্তিবদ্ধ হয়। ২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর তৎকালীন জয়পুরহাট-২ আসনের সাংসদ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ভবনগুলোর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। চুক্তি অনুযায়ী ২০২২ সালের ২৯ জুন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।

পরবর্তী সময়ে ঠিকাদারের অনুরোধে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ ৩ দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর প্রকল্পের কাজ শেষ করতে নির্দেশ দেয়। কাজ শেষ না করে গত বছরের মার্চ মাসে লাপাত্তা হন ঠিকাদার। ভবনগুলোর কাজ শেষ করার জন্য এলজিইডি থেকে বারবার ঠিকাদারকে তাগাদা দেওয়া হলেও সাড়া দিচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটি। তিনটি হাটে গড়ে ৩৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

গত শনি ও রোববার হাটে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি হাটে প্রায় ৭০ শতাংশ জায়গাজুড়ে নির্মাণাধীন ভবনে আরসিসি পিলার দাঁড়িয়ে আছে। কোথাও একতলায় ছাদ এবং দ্বিতীয় তলায় পিলার আছে। রডগুলোতে মরিচা ধরেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাউকে প্রকল্প সাইটে পাওয়া যায়নি।

রায়কালী হাটের চাল ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান

তিন উপজেলায় হাটে ভবন নির্মাণ

সাড়ে চার বছরে প্রকল্পের অগ্রগতি ৩৮ শতাংশ

উন্মুক্ত স্থান ও গাছতলায় বসছেন ব্যবসায়ীরা

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার হারুঞ্জা হাটে অসম্পন্ন একটি মার্কেট ভবন

বলেন, শুরু থেকে ঠিক মতো কাজ করেননি ঠিকাদার। একদিন কাজ করলে এক মাস বন্ধ ছিল কাজ। জায়গার অভাবে অনেকে হাটের বাইরে বটতলাতে দোকান বসাচ্ছেন। আগের চেয়ে হাটে লোকজনের সমাগম কম। বেচাকেনাও কমে গেছে। নিয়মিত লোকসান গুনতে হচ্ছে।

লালাগড় হাটের মুদি দোকানি আহসান হাবিব বলেন, হাটে দোকান বসাতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বৃষ্টি হলেই দোকানদাররা দৌড়াদৌড়ি করে। রোদে গা পুড়ে যায়। জায়গা নেই তো কী হয়েছে, ইজারাদার ঠিকই খাজনা আদায় করছেন। মার্কেট নির্মাণকাজ বন্ধ থাকলেও দেখার যেন কেউ নেই।

রায়কালী হাটের ইজারাদার রাশেদুজ্জামান জানান, হাটের বেশির ভাগ জায়গায় ভবন নির্মাণের কাজ কচ্ছপগতিতে চলেছে। এখন সম্পূর্ণ বন্ধ আছে। বর্ষা মৌসুমে কাদাপানিতে একাকার হয়ে কেনাকাটা করতে হবে জনসাধারণকে।

হারুঞ্জা হাটের ইজারাদার বজলুর রহমান বলেন, এমনিতেই হাটের জায়গা নেই। কয়েক বছর ধরে ধীরগতিতে চলছে নতুন ভবনের কাজ। এতে ক্রেতা-বিক্রেতারা ভোগান্তির মুখে পড়েছেন। খাজনা আদায়ে গেলে ব্যবসায়ীদের গালি শুনতে হচ্ছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মণ্ডল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর আলমের ভাষ্য, দফায় দফায় নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ার কারণে মূলত কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। এ প্রকল্পের তাঁর অনেক লোকসান হয়েছে। এলজিইডি যে কোনো সিদ্ধান্তে তাঁর কোনো আপত্তি নেই।

এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ আলম জানান, বারবার নোটিশ দেওয়া সত্ত্বেও কাজের অগ্রগতি নেই। ঠিকাদারের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছিল তা বাতিল করা হয়েছে। এখন আবার টেন্ডার করে নতুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আওতায় প্রকল্পের কাজ শেষ করার সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।