Dhaka 5:34 pm, Friday, 7 November 2025

বিদ্যুৎবিহীন পরিবার গরমে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে জীবন বাচাঁন

হাতের নাগালে বৈদ্যুতিক খুঁটি-তার এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ সেবা আশেপাশের বাড়িঘরে বিদ্যুৎ এর লাইট জলছে, ফ্যানের শান্তির ভাসাতে আরামদায়ক জীবন যাপন চোখের সামনে দেখলেও নিজেদের ভাগ্যে এমন সুযোগ একযুগ ধরে অধরাই রয়েছে ইসার উদ্দিন ভূঁইয়া সহ ১০-১২ টি পরিবারের অর্ধশতাধিক বৃদ্ধ থেকে শিশুর জীবনে।

ইসার উদ্দিন ভূঁইয়া সাত ছেলে নিয়ে গ্রামের পৈত্রিক পুরাতন বাড়িতে জায়গা সংকটে বসবাসের অসুবিধার জন্য গ্রামের উত্তর পাড়ায় খালি জায়গায় প্রায় একযুগ আগে বাড়ি করার উদ্যোগ নেন। প্রথমে তাহার বড় ছেলে আমির উদ্দিন ভূঁইয়া বসবাস শুরু করে। একে একে তাহার সাত ছেলের পরিবারের বৃদ্ধ থেকে শিশু, নারী পুরুষ মিলে প্রায় ২৮-৩০ জন সহ আব্দুর সালাম ভুঁইয়া, আবু ইউসুফ ভূঁইয়া, ইকরাম হোসাইন ভুঁইয়া , ফারুক আহমেদ ভূঁইয়া ও মাছুম ভূঁইয়ার পাঁচটি পরিবারের আরো ২০-২২ জন সদস্যদের বসবাস সেখানে শুরু হয়।

ইসার উদ্দিন ভূঁইয়া ব্রাহ্মণবাড়িযার বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তী ইউনিয়ন সেমড়া গ্রামের মৃত সিরাজ উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে। বাকি সদস্যরা তাহার বংশের লোকজন। তাদের বসবাসের একযুগ অতিবাহিত হলেও ব্রাহ্মণবাড়িযা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিভিন্ন অফিসে ও দালালদের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করেও বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে না পারায় অতি দুর্ভোগের মধ্যে জীবন যাপন করছে। গরমের মৌসুমে পরিবার গুলোর বৃদ্ধ ও বাচ্চাদের অবস্থা ভয়াবহ রুপ ধারণ করে। তখন অনেকেই বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে জীবনের শান্তি খুঁজে।

ইসার উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, এই গ্রামে পৈত্রিক বসতবাড়ি হলেও জনসংখ্যা বৃদ্ধি কারনে গ্রামের উত্তরে খালি জায়গায় বিগত বারো বছর আগে বসবাসের জন্য বাড়ি নির্মাণ করার পর থেকে বিদ্যুৎ এর ভোগান্তি শুরু হয়েছে। শুরুতে একাধিকবার পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করলে কোন সুরাহা পাইনি। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী বাধ্য হয়ে দালালের শরণাপন্ন হওয়ার পর থেকে ঘুরছি। সর্বশেষে উপজেলার বুধন্তী গ্রামের আজগর আলী নামের এক ইলেকট্রিশিয়ানের সাথে ৭০ হাজার টাকা চুক্তি করে ২০ হাজার টাকা দিয়ে দুই বছরের অধিক সময় ধরে ঘুরছি। এর মধ্যে স্থানীয় নির্বাচিত মেম্বার বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ ফারুক আহমেদ জানান আমাদের বিদ্যুতের ব্যবস্থা হয়েছে জরুরী আজকের মধ্যেই একটি নাম্বার দিয়েছে, তখন তাদের সাথে কথা বলে ৭ হাজার টাকা বিকাশে পাঠানো হয়েছে। সে বলেছিলো টাকা পাঠানোর ২-৩ দিনের ভিতরে বিদ্যুৎ আসবে কিন্তু এই টাকা দেওয়ার পাঁচ মাস হলেও কোন খুঁজখবর নেই। তাকে বললে সে আসবে বলে কালক্ষেপণ করে যাচ্ছে।

তিনি আরো জানান, এই গরমে তাঁহার স্ত্রী অসুস্থ বৃদ্ধ মানুষ কষ্ট সহ্য করতে না পারার কারনে ঢাকায় এক ছেলের বাসায় দিয়ে রেখেছে। দুই পুত্রবধূকে ছোট ছোট নাতি-নাতনি সহ তাদের বাবার বাড়িতে ২-৩ মাস যাবত পাঠিয়ে রেখেছে। গরমকালে বাড়িতে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠে। এই সময় আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে জীবন অতিবাহিত করতে হচ্ছে।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এই বাড়িতে এসে একযুগ চেষ্টা করেও বিদ্যুৎ পেলাম না। মৃত্যুর আগে পাবো কি না সেটাও বুঝতে পারছি না। আমাদের মতো এমন করুণ পরিণতি যেন আর কারো জীবনে না আসে সেই কামনা করি।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ১০-১২ টি পরিবারের ৫০-৫৫ জন সদস্যদের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। তাদের বাড়ির একশো গজ পূর্ব পাশের বাড়িতে বিদ্যুৎ রয়েছে, দুইশো গজ উত্তর দিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ এর লাইন বয়ে গেছে। পশ্চিম ও দক্ষিণে এক-দের শত গজ দুরের বাড়িতে বিদ্যুৎ থাকলেও মাঝের ১০-১২ টি পরিবার বিদ্যুৎ বিহীন।

প্রবাসী মাছুম ভূঁইয়া জানান, এখানে বাড়ি তৈরি করে যেন মহাপাপ করেছি। আমাদের কষ্টের বিষয়টি কেউ পাত্তা দিচ্ছে না। ঘরে একটা ফ্রিজ, ফ্যান ব্যবহার করতে পারছি না। এমন কি বর্তমান যুগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোবাইল অন্যের বাড়িতে গিয়ে অনুরোধ করে চার্জে লাগতে হয়। লজ্জায় বাড়িতে একটা মেহমান আনতে পারি না এই দুঃখ কোথায় বলবো।

স্থানীয় ইলেকট্রিশিয়ান আজগর আলী জানান, আমি বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে তাদের সহযোগিতা করবো বলেছি। এবং সহযোগিতা করে যাচ্ছি। তাদের সহযোগিতা ঠিকমতো না পাওয়ার কারনে দেরি হচ্ছে।

প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ ফারুক আহমেদ জানান, ইসার উদ্দিন ভূইয়া সম্পর্কে আমার চাচা লাগে। কিছুদিন আগে বিদ্যুৎ অফিস থেকে আমাকে তাদের বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য যোগাযোগ করে কিছু টাকা জমা দেওয়ার জন্য একটি নাম্বার দেয়। তখন আমি ইসার উদ্দিন ভূইয়া চাচাকে নাম্বারটিতে যোগাযোগ করে টাকা জমা দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ আনতে বলি। পরে তারা বিদ্যুৎ না পেলে আমার কাছে আবার আসিলে আমি তাদের আবেদন এর কপিটি নিয়ে অফিসে যাওয়ার কথা বললে তারা আবেদনের কপিটা খুঁজে না পাওয়ার কারনে অফিসে যাওয়া হয়নি।

বিজয়নগর সাব জোনাল অফিসের এজিএম প্রশান্ত বিশ্বাস জানান, আমাদের কাছে গ্রাহন নিজে আসলে আমরা যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

কমলগঞ্জে শুরু মণিপুরীদের ১৮৩তম মহারাসলীলা উৎসব শুরু

বিদ্যুৎবিহীন পরিবার গরমে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে জীবন বাচাঁন

Update Time : 06:55:26 pm, Wednesday, 30 July 2025

হাতের নাগালে বৈদ্যুতিক খুঁটি-তার এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ সেবা আশেপাশের বাড়িঘরে বিদ্যুৎ এর লাইট জলছে, ফ্যানের শান্তির ভাসাতে আরামদায়ক জীবন যাপন চোখের সামনে দেখলেও নিজেদের ভাগ্যে এমন সুযোগ একযুগ ধরে অধরাই রয়েছে ইসার উদ্দিন ভূঁইয়া সহ ১০-১২ টি পরিবারের অর্ধশতাধিক বৃদ্ধ থেকে শিশুর জীবনে।

ইসার উদ্দিন ভূঁইয়া সাত ছেলে নিয়ে গ্রামের পৈত্রিক পুরাতন বাড়িতে জায়গা সংকটে বসবাসের অসুবিধার জন্য গ্রামের উত্তর পাড়ায় খালি জায়গায় প্রায় একযুগ আগে বাড়ি করার উদ্যোগ নেন। প্রথমে তাহার বড় ছেলে আমির উদ্দিন ভূঁইয়া বসবাস শুরু করে। একে একে তাহার সাত ছেলের পরিবারের বৃদ্ধ থেকে শিশু, নারী পুরুষ মিলে প্রায় ২৮-৩০ জন সহ আব্দুর সালাম ভুঁইয়া, আবু ইউসুফ ভূঁইয়া, ইকরাম হোসাইন ভুঁইয়া , ফারুক আহমেদ ভূঁইয়া ও মাছুম ভূঁইয়ার পাঁচটি পরিবারের আরো ২০-২২ জন সদস্যদের বসবাস সেখানে শুরু হয়।

ইসার উদ্দিন ভূঁইয়া ব্রাহ্মণবাড়িযার বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তী ইউনিয়ন সেমড়া গ্রামের মৃত সিরাজ উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে। বাকি সদস্যরা তাহার বংশের লোকজন। তাদের বসবাসের একযুগ অতিবাহিত হলেও ব্রাহ্মণবাড়িযা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিভিন্ন অফিসে ও দালালদের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করেও বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে না পারায় অতি দুর্ভোগের মধ্যে জীবন যাপন করছে। গরমের মৌসুমে পরিবার গুলোর বৃদ্ধ ও বাচ্চাদের অবস্থা ভয়াবহ রুপ ধারণ করে। তখন অনেকেই বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে জীবনের শান্তি খুঁজে।

ইসার উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, এই গ্রামে পৈত্রিক বসতবাড়ি হলেও জনসংখ্যা বৃদ্ধি কারনে গ্রামের উত্তরে খালি জায়গায় বিগত বারো বছর আগে বসবাসের জন্য বাড়ি নির্মাণ করার পর থেকে বিদ্যুৎ এর ভোগান্তি শুরু হয়েছে। শুরুতে একাধিকবার পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করলে কোন সুরাহা পাইনি। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী বাধ্য হয়ে দালালের শরণাপন্ন হওয়ার পর থেকে ঘুরছি। সর্বশেষে উপজেলার বুধন্তী গ্রামের আজগর আলী নামের এক ইলেকট্রিশিয়ানের সাথে ৭০ হাজার টাকা চুক্তি করে ২০ হাজার টাকা দিয়ে দুই বছরের অধিক সময় ধরে ঘুরছি। এর মধ্যে স্থানীয় নির্বাচিত মেম্বার বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ ফারুক আহমেদ জানান আমাদের বিদ্যুতের ব্যবস্থা হয়েছে জরুরী আজকের মধ্যেই একটি নাম্বার দিয়েছে, তখন তাদের সাথে কথা বলে ৭ হাজার টাকা বিকাশে পাঠানো হয়েছে। সে বলেছিলো টাকা পাঠানোর ২-৩ দিনের ভিতরে বিদ্যুৎ আসবে কিন্তু এই টাকা দেওয়ার পাঁচ মাস হলেও কোন খুঁজখবর নেই। তাকে বললে সে আসবে বলে কালক্ষেপণ করে যাচ্ছে।

তিনি আরো জানান, এই গরমে তাঁহার স্ত্রী অসুস্থ বৃদ্ধ মানুষ কষ্ট সহ্য করতে না পারার কারনে ঢাকায় এক ছেলের বাসায় দিয়ে রেখেছে। দুই পুত্রবধূকে ছোট ছোট নাতি-নাতনি সহ তাদের বাবার বাড়িতে ২-৩ মাস যাবত পাঠিয়ে রেখেছে। গরমকালে বাড়িতে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠে। এই সময় আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে জীবন অতিবাহিত করতে হচ্ছে।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এই বাড়িতে এসে একযুগ চেষ্টা করেও বিদ্যুৎ পেলাম না। মৃত্যুর আগে পাবো কি না সেটাও বুঝতে পারছি না। আমাদের মতো এমন করুণ পরিণতি যেন আর কারো জীবনে না আসে সেই কামনা করি।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ১০-১২ টি পরিবারের ৫০-৫৫ জন সদস্যদের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। তাদের বাড়ির একশো গজ পূর্ব পাশের বাড়িতে বিদ্যুৎ রয়েছে, দুইশো গজ উত্তর দিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ এর লাইন বয়ে গেছে। পশ্চিম ও দক্ষিণে এক-দের শত গজ দুরের বাড়িতে বিদ্যুৎ থাকলেও মাঝের ১০-১২ টি পরিবার বিদ্যুৎ বিহীন।

প্রবাসী মাছুম ভূঁইয়া জানান, এখানে বাড়ি তৈরি করে যেন মহাপাপ করেছি। আমাদের কষ্টের বিষয়টি কেউ পাত্তা দিচ্ছে না। ঘরে একটা ফ্রিজ, ফ্যান ব্যবহার করতে পারছি না। এমন কি বর্তমান যুগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোবাইল অন্যের বাড়িতে গিয়ে অনুরোধ করে চার্জে লাগতে হয়। লজ্জায় বাড়িতে একটা মেহমান আনতে পারি না এই দুঃখ কোথায় বলবো।

স্থানীয় ইলেকট্রিশিয়ান আজগর আলী জানান, আমি বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে তাদের সহযোগিতা করবো বলেছি। এবং সহযোগিতা করে যাচ্ছি। তাদের সহযোগিতা ঠিকমতো না পাওয়ার কারনে দেরি হচ্ছে।

প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ ফারুক আহমেদ জানান, ইসার উদ্দিন ভূইয়া সম্পর্কে আমার চাচা লাগে। কিছুদিন আগে বিদ্যুৎ অফিস থেকে আমাকে তাদের বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য যোগাযোগ করে কিছু টাকা জমা দেওয়ার জন্য একটি নাম্বার দেয়। তখন আমি ইসার উদ্দিন ভূইয়া চাচাকে নাম্বারটিতে যোগাযোগ করে টাকা জমা দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ আনতে বলি। পরে তারা বিদ্যুৎ না পেলে আমার কাছে আবার আসিলে আমি তাদের আবেদন এর কপিটি নিয়ে অফিসে যাওয়ার কথা বললে তারা আবেদনের কপিটা খুঁজে না পাওয়ার কারনে অফিসে যাওয়া হয়নি।

বিজয়নগর সাব জোনাল অফিসের এজিএম প্রশান্ত বিশ্বাস জানান, আমাদের কাছে গ্রাহন নিজে আসলে আমরা যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহন করবো।