
নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের শোভানগঞ্জ গুচ্ছগ্রামে নারী ও শিশু নির্যাতনের একটি স্পর্শকাতর ঘটনার অনুসন্ধানে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন ডিমলা উপজেলা প্রেসক্লাবের কয়েকজন সদস্যকে। স্থানীয় প্রভাবশালী একদল ব্যক্তি সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে সরাসরি বাধা প্রদান করে, এমনকি তাদের হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী সাংবাদিকদের একজন জানান, ৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায়, তারা স্থানীয়ভাবে আলোচিত পার্শ্ববর্তী এলাকার মোছাঃ আখিঁ মনি (ছদ্মনাম), ১০ম শ্রেণীর ছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে স্থানীয় আঃ জলিলের ছেলে মোঃ বিপ্লব দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্কে শারীরিক সম্পর্ক করেন মর্মে অভিযোগের একটি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা যাচাই ও প্রমাণ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে শোভানগঞ্জ গুচ্ছগ্রামে আঃজলিলের বাড়িতে সাংবাদিকরা যখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন, তখন স্থানীয় আঃ খলিলের ছেলে মোঃ আনোয়ার হোসেন ওরফে নায়েব আলী নামক এক ব্যক্তির নেতৃত্বে ৫-৬ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি তাদের ঘিরে ধরেন। প্রথমে তারা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে অস্বীকৃতি জানান, পরে সরাসরি তাদের ভিডিও ধারণ, সাক্ষাৎকার নেওয়া ও তথ্য সংগ্রহে বাধা দেন।
সাংবাদিকদের একজন বলেন, “আমরা তখনই বুঝে যাই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে। আমাদের ক্যামেরা বন্ধ করতে বলা হয় এবং এলাকা ছেড়ে যেতে চাপ দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে একজন আমাদের হুমকি দিয়ে বলেন, ‘এইসব ঘাঁটাঘাঁটি করলে ভালো হবে না’। বাধ্য হয়ে আমরা নিরাপত্তার কারণে দ্রুত স্থান ত্যাগ করি।”
এই ঘটনায় সাংবাদিক মহলে ক্ষোভ ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। ডিমলা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি বলেন,
“একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে যদি সাংবাদিকরা এমন হুমকির মুখে পড়েন, তাহলে তা কেবল পেশাগত দায়িত্বে বাধা নয়, বরং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকি। আমরা দোষীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা দাবি করছি।”
ডিমলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান,
“আমরা ঘটনাটি জেনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে প্রতিবেদন তৈরির সময় পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দাখিল হয়নি বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায় যে, ইতিপূর্বে শোভানগঞ্জ গুচ্ছগ্রাম এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ঘটনায় সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহে গেলে তখনও মোঃ আনোয়ার হোসেন ওরফে নায়েব আলী সাংবাদিকদের কাজে বাঁধা প্রদান করেন।
স্থানীয় এক মানবাধিকার কর্মী বলেন:
“সংবাদকর্মীরা যদি তথ্য সংগ্রহে গিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, তাহলে সেই সমাজে বিচার ও জবাবদিহিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে,
তিনি আরও বলেন,
“নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সমাজে ক্রমবর্ধমান। এ ধরনের ঘটনায় সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রীয় কর্তব্য।”
ডিমলা উপজেলায় সাংবাদিকদের হুমকি বা বাধা প্রদানের ঘটনা এটিই প্রথম নয়। আগেও একাধিকবার স্থানীয় প্রভাবশালীরা সংবাদকর্মীদের হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেসব ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যায়, এবং অপরাধীরা থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে।
শোভানগঞ্জ গুচ্ছগ্রামে সাংবাদিকদের উপর হামলার হুমকি ও তথ্য সংগ্রহে বাধা প্রদান কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি বৃহত্তর একটি সমস্যার প্রতিফলন-যেখানে ক্ষমতাবানদের অপকর্ম আড়াল করতে চেষ্টারত এক শ্রেণির প্রভাবশালী গোষ্ঠী বারবার সংবাদমাধ্যমকে রুখে দিতে চায়।
একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক সমাজে এই প্রবণতা ভয়ংকর। তদন্তের স্বচ্ছতা ও দোষীদের বিচারের আওতায় আনা না হলে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আরও বাড়তে পারে বলেই মনে করছেন সচেতন মহল।