ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর—যে অঞ্চলকে ফলের রাজ্য বলে ডাকতে স্থানীয়দের গর্বের শেষ নেই। চারপাশে সবুজ মাঠ, মাটির গন্ধ আর প্রকৃতির আপন ছায়ায় এই জনপদ যেন সারা বছরই রঙিন ফলের উত্সবে ব্যস্ত থাকে। আর সেই বিজয়নগরেই এখন সবচেয়ে বেশি আলো ছড়াচ্ছে বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ছতরপুর পূর্বপাড়ার খুকন মিয়ার দার্জিলিং কমলা বাগানটি।
এখানে মোঃ খুকন মিয়ার সাজানো-গোছানো কমলা বাগান যেন এক টুকরো শান্তির রাজ্য, সবুজ পাতার আড়ালে যেখানে দার্জিলিং কমলার সোনালি রঙ ঝিলমিল করে ওঠে।
প্রতিদিন ভোরের হালকা রোদে বাগানের পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে দেখা মেলে মানুষের ঢল। কেউ আসছেন পরিবারের সঙ্গে, কেউ বন্ধুবান্ধবের আড্ডার আশায়—আবার কেউ শুধু প্রকৃতির শীতল ছোঁয়া নিতে। কমলার টসটসে রঙ, গাছের ওপর ঝুলে থাকা গোল গোল ফলগুলো যেন সবাইকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। বয়স-ভেদ না করে দর্শনার্থীদের পদচারণায় বাগানটি দিনে দিনে হয়ে উঠছে উৎসবমুখর, প্রাণবন্ত।
দর্শনার্থীদের একজন হাসিমুখে বললেন, “দেশের অনেক জায়গাতেই আমরা ফলের বাগান দেখেছি, কিন্তু নিজের বিজয়নগরে এভাবে দার্জিলিং কমলার বাগান হবে—এটা আমাদের জন্য সত্যিই আনন্দের। বিজয়নগর তো এমনিতেই ফলের রাজ্য। সারা বছরই এখানে আম, লিচু, মাল্টা, আখ—কী নেই এই বিজয়নগরে।
এই প্রাণবন্ত বাগানের গর্বিত উদ্যোক্তা মোঃ খুকন মিয়া। তিনি জানালেন, “গত বছরের তুলনায় এবছর ফল কিছুটা কম হয়েছে, তবে আলহামদুলিল্লাহ, সন্তুষ্ট আছি। গত বছর প্রায় ৪ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেছি। এবার এখন পর্যন্ত ২ থেকে ২.৫ লাখ টাকার বিক্রি হয়েছে। সামনে আরও ১০ দিন বিক্রি চলবে—ইনশাআল্লাহ আরও ১ লাখ টাকার মতন বিক্রি হবে।”
বাগানের গেটে দাঁড়িয়ে তিনি আরও বলেন, “আমার বাগান সবার জন্য উন্মুক্ত। আসবেন, ঘুরে দেখবেন, চাইলে সরাসরি গাছ থেকে কমলা পেড়ে খেতে পারবেন। সবাইকে আগাম শুভেচ্ছা আর আমন্ত্রণ।”
সব মিলিয়ে, বিজয়নগরের প্রকৃতি, মানুষের আন্তরিকতা এবং ফলের অফুরন্ত সম্ভার মিলে সতরপুরের এই দার্জিলিং কমলা বাগান এখন স্থানীয় পর্যটনের নতুন এক আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। যেন প্রকৃতির কোলে সাজানো এক টুকরো রঙিন আনন্দভূমি।