
ঢাকায় আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদ এবং তিন দফা দাবির পক্ষে সারাদেশের মতো টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলছে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ মিছিল।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) প্রথম দিনের মতো উপজেলার সকল স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধ রেখে কর্মসূচি পালন করেছেন।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল থেকেই উপজেলার সকল এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে না গিয়ে প্রতিষ্ঠান চত্বরে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন। এছাড়াও সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজেদের উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে শিক্ষকরা জানান, শিক্ষক সমাজের ওপর একের পর এক হামলা ও অবমূল্যায়নের প্রতিবাদ এবং ৩ দফা দাবি আদায়ের জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলনই এখন তাদের একমাত্র পথ। তারা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
শিক্ষক ও কর্মচারীদের তিন দফা দাবি হলো, ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধি, কর্মচারীদের জন্য ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতা এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য ১,৫০০ টাকা হারে চিকিৎসা ভাতা চালু করা।
কবি নজরুল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, “আমরা শ্রেণিকক্ষে নয়, আজ রাজপথে। কারণ, আমাদের সহকর্মীরা যেভাবে লাঞ্ছিত হচ্ছেন, তাতে নীরব থাকা সম্ভব নয়। আমরা শিক্ষাদানের পবিত্র দায়িত্ব পালন করি, অথচ আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই, মানসম্মত বেতন-ভাতা নেই। সরকারের নিকট দ্রুত দাবি পূরণের আহ্বান জানাই।”
দারুস সুন্নাহ আলিম মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মো. ইমরান হোসাইন বলেন, শিক্ষকদের উপর হামলার দোষীদের বিচার চাই। এই আন্দোলন শুধু আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য নয়, এটি একটি সম্মান রক্ষার আন্দোলন। আমরা চাই, শিক্ষক সমাজের মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক।
শিক্ষার্থীরাও এই আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। এক স্কুল ছাত্র বলেন, স্যাররা ক্লাস নিচ্ছেন না, তাই পড়ালেখায় সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু আমরা জানি, তারা আমাদের ভবিষ্যতের জন্যই লড়ছেন। আমরা শিক্ষার্থীরা তাদের পাশে আছি।
এক কলেজ ছাত্রী বলেন, আমাদের ক্লাস বন্ধ থাকলেও আমি মনে করি, শিক্ষকদের দাবি ন্যায্য। শিক্ষকরা নিরাপদ না থাকলে শিক্ষার পরিবেশ থাকবে না। দ্রুত শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাই।
নাগরপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. ফজলুর রহমান বলেন, নাগরপুরের সকল মাধ্যমিক স্কুল আজ পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছে এবং শিক্ষার্থীদের নিয়ে দাবি আদায়ের জন্য বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে। সরকার যদি শিক্ষকদের দাবি না মানে, তাহলে এই কর্মবিরতি চলমান থাকবে।
বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি, নাগরপুর উপজেলা শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ মো. আনিসুর রহমান বলেন, “শিক্ষকদের দাবি আদায়ের যে কর্মবিরতি চলছে, তার সঙ্গে আমাদের সংগঠনের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। শিক্ষকদের ওপর হামলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। দোষীদের দ্রুত বিচার করতে হবে। এখন শুধু ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া নয়, আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিও জানাচ্ছি।”
এদিকে, কর্মবিরতির কারণে উপজেলার প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা বিষয়টিকে উদ্বেগের সঙ্গে দেখছেন। তবে শিক্ষকরা জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন এবং প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচির দিকে যেতে বাধ্য হবেন।
উল্লেখ্য,গত রোববার বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক অবস্থান কর্মসূচি থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের পক্ষ থেকে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন সংগঠনের নেতা অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী। তিনি বলেন, “জনদুর্ভোগ এড়াতে আমরা শহীদ মিনারেই অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছি। প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকেই আন্দোলন চলবে। আলোচনার মাধ্যমে, সহযোগিতার মাধ্যমে প্রজ্ঞাপন নিয়েই বিজয়ী বেশে আমরা শ্রেণিকক্ষে ফিরব, ইনশাআল্লাহ।
আপডেট সংবাদ- মার্চ টু সচিবালয়’ যাচ্ছেন শিক্ষকরা…
মোঃ হালিম মিয়া, নাগরপুর(টাংগাইল) প্রতিনিধি: 















