Dhaka 5:49 am, Saturday, 8 November 2025

টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাড়ে ১১ লাখ শিশুকে টাইফয়েডের টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় “শিশু, কিশোর-কিশোরী ও নারী উন্নয়নে সচেতনতামূলক প্রচার কর্যক্রম” প্রকল্পের আওতায় সোমবার সাংবাদিকদের নিয়ে টাইফয়েড টিকাদান বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল সোমবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা তথ্য অফিস আয়োজিত এই কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম।
গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (অর্থ ও লজিস্টিক) নাসিমা খাতুনের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি’র বক্তব্য রাখেন, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ নোমান মিয়া, প্রেসক্লাবের সভাপতি জাবেদ রহিম বিজন ও সাধারন সম্পাদক মোঃ বাহারুল ইসলাম মোল্লা।
কর্মশালার শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা তথ্য অফিসার দীপক চন্দ্র দাস। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, এটি দেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি। ৯ থেকে ১৫ বছর বয়সি প্রায় পাঁচ কোটি শিশুকে এই কর্মসূচির আওতায় বিনামূল্যে টাইফয়েডের টিকা দেয়া হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাড়ে ১১ লাখ শিশুকে টাইফয়েডের টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ৫ অক্টোবর নাগাদ প্রায় ৩৮ ভাগ শিশু এখনো টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেনি। আগামী ১২ অক্টোবর থেকে টিকা দেওয়া শুরু হবে। ওইদিন পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন করা হবে। রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শুরু হয় ১ আগস্ট থেকে। মোট ১৮ দিন চলবে টিকা কার্যক্রম। প্রথম ১০ দিন বিদ্যালয়ে ও পরের ৮ দিন স্থানীয় পর্যায়ে টিকা দেয়া হবে।
রেজিস্ট্রেশন ও টিকাদান কার্যক্রম বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহবান জানান তিনি। পরে একটি প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে সারাবিশ্ব ও দেশের পরিস্থিতির কথাও তিনি তুলে ধরেন।
জেলা তথ্য অফিস থেকে পাওয়া তালিকা অনুযায়ী, জেলার আখাউড়া ও আশুগঞ্জ উপজেলায় রেজিস্ট্রেশন সংখ্যা কম। আখাউড়ায় ৩৮ হাজার ২১৭ জন ও আশুগঞ্জে ৪০ হাজার ১৯৭ জন শিশু রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন।

এছাড়া জেলা সদরে ১ লাখ ২১ হাজার ৪৭৪ জন, বাঞ্ছারামপুরে ৭৯ হাজার ৩৪০ জন, বিজয়নগরে ৭০ হাজার ৪২৬ জন, কসবায় ৭২ হাজার ৮১০ জন, নবীনগরে এক লাখ ২৫ হাজার ৯১৯ জন, নাসিরনগরে ৭৭ হাজার ৪২৭ জন, সরাইলে এক লাখ এক হাজার ২১৬ জন রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেন।
কর্মশালায় জানানো হয়, টাইফয়েড জ্বর হলো প্রতিরোধযোগ্য সংক্রামক রোগ। টাইফয়েড জ্বর থেকে শিশুকে সুরক্ষিত রাখতে এই টিকা দেওয়া জরুরি। প্রতিবছর বিশ্বে ৯০ লাখ মানুষ টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয় ও এক লাখ ১০ হাজার মানুষ মারা যান। মৃত্যুবরণকারিদের বেশিরভাগই দক্ষিণ এশিয়ার এবং সাব-সাহারান আফ্রিকায় বসবাসকারি মানুষ।

এদিকে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। একটি সমীক্ষা অনুযায়ি, ২০২১ সালে চার লাখ ৭৮ হাজার জন টাইফয়েডে আক্রান্ত হন এবং আট হাজার মারা যায়, যার মধ্যে ৬৮ শতাংশই ছিলো শিশু।

কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, আমাদের দেশে প্রতি বছর টাইফয়েডে মানুষ মারা যায়। তার মধ্যে অধিকাংশই বাচ্চা। আসলে যার বাচ্চা মারা যায়, সে বলতে পারবে তার কত কষ্ট। এজন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। তেলাপোকা টাইফয়েড রোগের অন্যতম কারণ। আমাদের দেশের অধিকাংশ বাড়িতে খাবার ঢেকে রাখে না। সেই খাবারের ওপর দিয়ে তেলাপোকা হেঁটে যায়। এসব খাবার খেয়ে টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়।
তিনি বলেন, দেশের দুর্দিনে সরকার বিনা মূল্যে টাইফয়েড ভ্যাকসিন দিচ্ছে। শুধু ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কণ্যানের জন্য। আজকে যারা ছোট, ভবিষ্যতে তারাই হবে দেশের কর্ণধার। আপনারা যারা সাংবাদিক আছেন, টাইফয়েড ভ্যাকসিন বিষয়ে জনগণের কাছে তুলে ধরবেন। তিনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংবাদিকরা দায়িত্বের প্রতি অনেক আন্তরিক। দেশের অন্যান্য জেলা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংবাদিকরা ব্যতিক্রম। তিনি বলেন, আপনারা টাইফয়েড ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন বিষয়টি সবার মাঝে প্রচার করবেন, যাতে প্রতিটি বাচ্চা টাইফয়েড ভ্যাকসিন গ্রহণ করে সুস্থ থাকে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

কমলগঞ্জে শুরু মণিপুরীদের ১৮৩তম মহারাসলীলা উৎসব শুরু

টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

Update Time : 08:58:00 pm, Monday, 6 October 2025

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাড়ে ১১ লাখ শিশুকে টাইফয়েডের টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় “শিশু, কিশোর-কিশোরী ও নারী উন্নয়নে সচেতনতামূলক প্রচার কর্যক্রম” প্রকল্পের আওতায় সোমবার সাংবাদিকদের নিয়ে টাইফয়েড টিকাদান বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল সোমবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা তথ্য অফিস আয়োজিত এই কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম।
গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (অর্থ ও লজিস্টিক) নাসিমা খাতুনের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি’র বক্তব্য রাখেন, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ নোমান মিয়া, প্রেসক্লাবের সভাপতি জাবেদ রহিম বিজন ও সাধারন সম্পাদক মোঃ বাহারুল ইসলাম মোল্লা।
কর্মশালার শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা তথ্য অফিসার দীপক চন্দ্র দাস। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, এটি দেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি। ৯ থেকে ১৫ বছর বয়সি প্রায় পাঁচ কোটি শিশুকে এই কর্মসূচির আওতায় বিনামূল্যে টাইফয়েডের টিকা দেয়া হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাড়ে ১১ লাখ শিশুকে টাইফয়েডের টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ৫ অক্টোবর নাগাদ প্রায় ৩৮ ভাগ শিশু এখনো টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেনি। আগামী ১২ অক্টোবর থেকে টিকা দেওয়া শুরু হবে। ওইদিন পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন করা হবে। রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শুরু হয় ১ আগস্ট থেকে। মোট ১৮ দিন চলবে টিকা কার্যক্রম। প্রথম ১০ দিন বিদ্যালয়ে ও পরের ৮ দিন স্থানীয় পর্যায়ে টিকা দেয়া হবে।
রেজিস্ট্রেশন ও টিকাদান কার্যক্রম বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহবান জানান তিনি। পরে একটি প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে সারাবিশ্ব ও দেশের পরিস্থিতির কথাও তিনি তুলে ধরেন।
জেলা তথ্য অফিস থেকে পাওয়া তালিকা অনুযায়ী, জেলার আখাউড়া ও আশুগঞ্জ উপজেলায় রেজিস্ট্রেশন সংখ্যা কম। আখাউড়ায় ৩৮ হাজার ২১৭ জন ও আশুগঞ্জে ৪০ হাজার ১৯৭ জন শিশু রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন।

এছাড়া জেলা সদরে ১ লাখ ২১ হাজার ৪৭৪ জন, বাঞ্ছারামপুরে ৭৯ হাজার ৩৪০ জন, বিজয়নগরে ৭০ হাজার ৪২৬ জন, কসবায় ৭২ হাজার ৮১০ জন, নবীনগরে এক লাখ ২৫ হাজার ৯১৯ জন, নাসিরনগরে ৭৭ হাজার ৪২৭ জন, সরাইলে এক লাখ এক হাজার ২১৬ জন রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেন।
কর্মশালায় জানানো হয়, টাইফয়েড জ্বর হলো প্রতিরোধযোগ্য সংক্রামক রোগ। টাইফয়েড জ্বর থেকে শিশুকে সুরক্ষিত রাখতে এই টিকা দেওয়া জরুরি। প্রতিবছর বিশ্বে ৯০ লাখ মানুষ টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয় ও এক লাখ ১০ হাজার মানুষ মারা যান। মৃত্যুবরণকারিদের বেশিরভাগই দক্ষিণ এশিয়ার এবং সাব-সাহারান আফ্রিকায় বসবাসকারি মানুষ।

এদিকে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। একটি সমীক্ষা অনুযায়ি, ২০২১ সালে চার লাখ ৭৮ হাজার জন টাইফয়েডে আক্রান্ত হন এবং আট হাজার মারা যায়, যার মধ্যে ৬৮ শতাংশই ছিলো শিশু।

কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, আমাদের দেশে প্রতি বছর টাইফয়েডে মানুষ মারা যায়। তার মধ্যে অধিকাংশই বাচ্চা। আসলে যার বাচ্চা মারা যায়, সে বলতে পারবে তার কত কষ্ট। এজন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। তেলাপোকা টাইফয়েড রোগের অন্যতম কারণ। আমাদের দেশের অধিকাংশ বাড়িতে খাবার ঢেকে রাখে না। সেই খাবারের ওপর দিয়ে তেলাপোকা হেঁটে যায়। এসব খাবার খেয়ে টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়।
তিনি বলেন, দেশের দুর্দিনে সরকার বিনা মূল্যে টাইফয়েড ভ্যাকসিন দিচ্ছে। শুধু ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কণ্যানের জন্য। আজকে যারা ছোট, ভবিষ্যতে তারাই হবে দেশের কর্ণধার। আপনারা যারা সাংবাদিক আছেন, টাইফয়েড ভ্যাকসিন বিষয়ে জনগণের কাছে তুলে ধরবেন। তিনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংবাদিকরা দায়িত্বের প্রতি অনেক আন্তরিক। দেশের অন্যান্য জেলা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংবাদিকরা ব্যতিক্রম। তিনি বলেন, আপনারা টাইফয়েড ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন বিষয়টি সবার মাঝে প্রচার করবেন, যাতে প্রতিটি বাচ্চা টাইফয়েড ভ্যাকসিন গ্রহণ করে সুস্থ থাকে।