
পবিত্র ঈদুল আজহা প্রায় সমাগত আর মাত্র কয়দিন বাকি। এরই মধ্যে কোরবানীর পশুবাহী ট্রাকের চাপ বাড়তে শুরু করেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাটে। তবে পশুবাহী ট্রাকের চাপ বাড়লেও দীর্ঘ অপেক্ষা ও ভোগান্তি ছাড়াই সরাসরি ফেরীর নাগাল পাচ্ছে পশুবাহী যানবাহনগুলো।এতে খুশি গরুর মালিক ও বেপারীসহ গাড়ীর চালকরা।গতকাল ২ রা জুন দুপুর ১টার দিকে দৌলতদিয়া ফেরী ঘাটে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘন্টায় এই ঘাট ব্যবহার করে নদী পারাপার হয়েছে ১হাজার ৬৩৮টি যানবাহন। এর মধ্যে যাত্রীবাহী বাস ২২১টি, পণ্যবাহী ট্রাক ৬৫৯টি, ছোট গাড়ী ৭১৮টি ও ১২০টি মোটর সাইকেল।কুষ্টিয়া থেকে ট্রাকে আসা গরুর ব্যবসায়ী মোঃ টিটু বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার পর থেকে ঘাটে কোন দুর্ভোগ নেই। এ বছরও কোন সিরিয়ালে আটকে থাকতে হয়নি, সরাসরি ঘাটে এসে ফেরীতে উঠতে পারছি।
পদ্মা সেতু চালুর পর এ রুটে যানবাহনের চাপ কিছুটা কমলেও ঈদ মৌসুমে তা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। ঈদের সময় প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার যানবাহন এবং ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার যাত্রী পারাপার হয়ে থাকে। এর মধ্যে গরুবোঝাই অতিরিক্ত ট্রাক যুক্ত হওয়ায় ঘাট ব্যবস্থাপনায় বাড়তি চাপ তৈরি হয়। আরেক ব্যবসায়ী আলিফ বলেন, বিগত ২-৩ বছর যাবত ঘাটে দুর্ভোগ নেই। পদ্মা সেতু হওয়ার আগে দৌলতদিয়া ঘাটে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। ফেরীর জন্য ঘন্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে এই তীব্র গরমে অনেক গরু গাড়ীতে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এখন পদ্মা সেতু হওয়ায় ফেরীতে চাপ কম পড়ায় কোনো ধরণের দুর্ভোগ ছাড়াই ঝিনাইদাহ থেকে সরাসরি দৌলতদিয়া ঘাটে আসতে পেরেছি এবং সময়মতো গরু ঢাকায় নিতে পারবো বলে আশা করছি।দৌলতদিয়ার রাস্তায় কোন যানজট নেই। সরাসরি ট্রাকে ফেরী ঘাটে এসেছি। তবে দুই বছর আগে ঘন্টার পর ঘন্টা ফেরীর জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে। ওই সময় গরমে গরু ও তারা অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছে এবং সময়মতো গরু হাটে নিতে না পারায় লোকসান হয়েছে। কিন্তু এবার সঠিক সময়ে ভোগান্তি ছাড়াই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন এবং ভালো দামে গরু বিক্রি করবেন বলে আশাবাদী তারা।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক(এজিএম) মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। তাছাড়া বর্তমানে বৈরী আবহাওয়ায় নদীতে বাতাস বইছে, যে কারণে ফেরীগুলো নদী পারাপার হতে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি সময় লাগছে। বর্তমানে এ নৌপথে ছোট-বড় ১২টি ফেরী দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন আরো বলেন, ঈদ উপলক্ষে ফেরিগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে ১৭টি ফেরি প্রস্তুত আছে এবং প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত ঘাট চালু করা হবে। কোরবানির পশুবাহী ট্রাকগুলো পারাপারে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নাহিদুর রহমান বলেন, এ বছর ঈদে লম্বা ছুটি থাকছে। যদিও পদ্মা সেতু হওয়াতে দৌলতদিয়া ঘাটে চাপ কমে গেছে। তারপরও আমরা ঘাট দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে সকল ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। তিনি আরও বলেন, ঘাটে আসা পশুবাহী গাড়ীগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেন পার হতে পারে, ঘাটে এসে যেন অপেক্ষা করতে না হয় সেজন্য আমরা সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।
স্থানীয় বাসিন্দা, যাত্রী ও পরিবহন চালকরা জানান, পদ্মা সেতু চালুর পর যানবাহনের চাপ কিছুটা কমেছে এবং প্রশাসনের তৎপরতায় আগের মতো ভোগান্তি নেই। তবে বৈরী আবহাওয়া ও পদ্মায় পানি বৃদ্ধির কারণে কিছুটা উদ্বেগ রয়েছে।
দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটের ম্যানেজার নুরুল আনোয়ার মিলন জানান, অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ন্ত্রণে ঘাটে প্রশাসনের তৎপরতা থাকবে। ২০টি লঞ্চ চলাচলে যাত্রী পারাপারে কোনো সমস্যা হবে নারাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মো.কামরুল ইসলাম জানান, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, যানবাহনের গতিবিধি মনিটরিং ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে জেলা পুলিশ সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে। নদীপথে পশুবাহী ট্রলারের চলাচলে গোয়ালন্দ থানা পুলিশ, নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ড যৌথভাবে দায়িত্ব পালন করছে। সড়কে নিরাপত্তায় হাইওয়ে পুলিশ কাজ করবে।