Dhaka 7:32 am, Friday, 18 July 2025

রংপুরে বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে জমির ফসল, দুশ্চিন্তায় কৃষক

বুধবার (২১ মে) বেলা ১১টা পর্যন্ত রংপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে দু’দিনে প্রায় ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

রংপুরের অনেক স্থানে এখনও পুরোপুরি ধান মাড়াই শেষ হয়নি। কেউ ধান কাটলেও ধান মাড়াই করতে পারেননি বৃষ্টির কারণে। ফলে ধান নষ্ট হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারো কারো ধান পানির নিচে রয়েছে। দুই-একদিনের মধ্যে পানি না নেমে গেলে সেসব ধান আর কাটা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন ওই এলাকার কৃষকরা।

কয়েক দিনের বৃষ্টির পানি জমে পুরো ফসলের মাঠই ডুবে গেছে। ধান, আদা, শাক-সবজি সবই এখন পানির নিচে। এ কারণে কৃষকের চোখ- মুখে আতঙ্কের ছাপ দেখা দিয়েছে, কারণ ওই জমির ফসল ছিল তাদের একমাত্র ভরসা।

রানীপুকুরের পূর্বপাড়া এলাকার রহিম উদ্দিন বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে জমি বন্ধক নিয়ে এবং ঋণ করে আবাদ করেছি, কয়েক দিনের বৃষ্টির পানিতে সব আশা শেষ। এই মৌসুমের রুজি-রোজগারের সব আশা শেষ। এক একর জমির কাঁকরোল, এক একরের করলা, শসা সব পানির নিচে। আর দুই-এক দিন পানিতে থাকলে গাছ মারা যাওয়া শুরু করবে। এদিকে বৃষ্টি থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। চলতেই আছে বৃষ্টি।’

মিঠাপুকুর উপজেলা কৃষি অফিসার মুহাম্মদ সাইফুল আবেদীন বলেন, ‘টানা বৃষ্টির কারণে কয়েক হেক্টর জমির ফসল পানিতে ডুবে গেলেও পানি নেমে যাওয়া শুরু করায় ক্ষতির আশঙ্কা কম। তবে প্রায় তিন হেক্টর জমির ফসল ক্ষতির মুখে রয়েছে। আমরা কৃষকের পাশে আছি, তাদের সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি। যেকোনো সমস্যা মোকাবিলায় সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’

এদিকে বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি বেড়ে রংপুরের গংগাচড়া ও কাউনিয়া উপজেলায় নিম্নাঞ্চলের ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে। এতে করে ধান, বাদাম, কাউন, শাকসবজি, মরিচ ও ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল তলিয়ে ক্ষতির মুখে পড়ে দিশেহারা এই অঞ্চলের কৃষকরা। বিশেষ করে বাদামের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। এ নিয়ে কৃষকরা চরম দুশ্চিন্তায়।

সাইফুল ইসলাম নামে এক কৃষক বলেন, ‘এমনিতেই চরাঞ্চলে এক মৌসুমের আবাদ হয়। সেটাও এবার আর হলো না। বাদাম চাষ করেছিল কিন্তু সব পানিতে ডুবে গেছে। এই পানি যে কবে কমবে। তবে পানি কমলেও তত দিনে বাদাম নষ্ট হয়ে যাবে। এবার চরম ক্ষতির মুখে পড়লাম।’

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ফসল পানিতে নিমজ্জিত হওয়া মানে, নষ্ট হয়ে যাওয়া নয়। যদি পানি এক সপ্তাহের মধ্যে সরে যায়, তাহলে জমির ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না। তাছাড়া জমির পানি যদি পরিষ্কার হয়, তাহলে তেমন চিন্তা নেই। তবে যদি পানি কাদা মিশ্রিত হয়, তাহলে ফসল দ্রুত সারিয়ে তুলতে পানি স্প্রে করে কাদা ধুয়ে ফেলতে হবে জমির। গত দু’দিনের তুলনায় বৃষ্টির পরিমাণ কমে গেছে। দুই-এক দিন বৃষ্টি না হলেই পানি নেমে যাবে।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বরেন্দ্র সচেতন সমাজ’র উদ্যোগে মাসব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন

রংপুরে বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে জমির ফসল, দুশ্চিন্তায় কৃষক

Update Time : 04:50:57 pm, Thursday, 22 May 2025

বুধবার (২১ মে) বেলা ১১টা পর্যন্ত রংপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে দু’দিনে প্রায় ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

রংপুরের অনেক স্থানে এখনও পুরোপুরি ধান মাড়াই শেষ হয়নি। কেউ ধান কাটলেও ধান মাড়াই করতে পারেননি বৃষ্টির কারণে। ফলে ধান নষ্ট হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারো কারো ধান পানির নিচে রয়েছে। দুই-একদিনের মধ্যে পানি না নেমে গেলে সেসব ধান আর কাটা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন ওই এলাকার কৃষকরা।

কয়েক দিনের বৃষ্টির পানি জমে পুরো ফসলের মাঠই ডুবে গেছে। ধান, আদা, শাক-সবজি সবই এখন পানির নিচে। এ কারণে কৃষকের চোখ- মুখে আতঙ্কের ছাপ দেখা দিয়েছে, কারণ ওই জমির ফসল ছিল তাদের একমাত্র ভরসা।

রানীপুকুরের পূর্বপাড়া এলাকার রহিম উদ্দিন বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে জমি বন্ধক নিয়ে এবং ঋণ করে আবাদ করেছি, কয়েক দিনের বৃষ্টির পানিতে সব আশা শেষ। এই মৌসুমের রুজি-রোজগারের সব আশা শেষ। এক একর জমির কাঁকরোল, এক একরের করলা, শসা সব পানির নিচে। আর দুই-এক দিন পানিতে থাকলে গাছ মারা যাওয়া শুরু করবে। এদিকে বৃষ্টি থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। চলতেই আছে বৃষ্টি।’

মিঠাপুকুর উপজেলা কৃষি অফিসার মুহাম্মদ সাইফুল আবেদীন বলেন, ‘টানা বৃষ্টির কারণে কয়েক হেক্টর জমির ফসল পানিতে ডুবে গেলেও পানি নেমে যাওয়া শুরু করায় ক্ষতির আশঙ্কা কম। তবে প্রায় তিন হেক্টর জমির ফসল ক্ষতির মুখে রয়েছে। আমরা কৃষকের পাশে আছি, তাদের সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি। যেকোনো সমস্যা মোকাবিলায় সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’

এদিকে বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি বেড়ে রংপুরের গংগাচড়া ও কাউনিয়া উপজেলায় নিম্নাঞ্চলের ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে। এতে করে ধান, বাদাম, কাউন, শাকসবজি, মরিচ ও ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল তলিয়ে ক্ষতির মুখে পড়ে দিশেহারা এই অঞ্চলের কৃষকরা। বিশেষ করে বাদামের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। এ নিয়ে কৃষকরা চরম দুশ্চিন্তায়।

সাইফুল ইসলাম নামে এক কৃষক বলেন, ‘এমনিতেই চরাঞ্চলে এক মৌসুমের আবাদ হয়। সেটাও এবার আর হলো না। বাদাম চাষ করেছিল কিন্তু সব পানিতে ডুবে গেছে। এই পানি যে কবে কমবে। তবে পানি কমলেও তত দিনে বাদাম নষ্ট হয়ে যাবে। এবার চরম ক্ষতির মুখে পড়লাম।’

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ফসল পানিতে নিমজ্জিত হওয়া মানে, নষ্ট হয়ে যাওয়া নয়। যদি পানি এক সপ্তাহের মধ্যে সরে যায়, তাহলে জমির ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না। তাছাড়া জমির পানি যদি পরিষ্কার হয়, তাহলে তেমন চিন্তা নেই। তবে যদি পানি কাদা মিশ্রিত হয়, তাহলে ফসল দ্রুত সারিয়ে তুলতে পানি স্প্রে করে কাদা ধুয়ে ফেলতে হবে জমির। গত দু’দিনের তুলনায় বৃষ্টির পরিমাণ কমে গেছে। দুই-এক দিন বৃষ্টি না হলেই পানি নেমে যাবে।’