Dhaka 11:33 pm, Wednesday, 16 July 2025

নড়াইলে সড়কের পাশে গাছ কেটে ফেলা, গোড়ার গর্তেই মরণফাঁদ

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মধুমতি সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে সদর উপজেলার গাবতলা পর্যন্ত মহাসড়কের পাশে টেন্ডারের মাধ্যমে গাছ কেটে নেওয়া হলেও চুক্তির শর্ত ভেঙে অনেক গাছের গোড়া তুলে ফেলা হয়েছে। কোথাও কোথাও সেই গোড়া অপসারণ না করে সড়কের পাশে ফেলে রাখা হয়েছে। এতে সড়কের দুই পাশে তৈরি হয়েছে গভীর গর্ত—যা এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।

এই গর্তগুলো বিশেষ করে রাতের আঁধারে ও বৃষ্টির সময় আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। ইতোমধ্যে কয়েকটি দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে, আহত হয়েছেন পথচারী ও বাইক আরোহীরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির ঘাটতির কারণেই এ ধরনের অনিয়ম ঘটছে এবং জনজীবনে বাড়ছে ঝুঁকি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, দরপত্রে উল্লেখ থাকা গাছ কাটার শর্তে বলা ছিল—গাছের গোড়া বা শিকড় মাটি থেকে উত্তোলন করা যাবে না। যদি তুলে ফেলতেই হয়, তবে সেই জায়গা মাটি দিয়ে ভরাট করে হেজিং (সবুজ প্রাচীর/গাছের সারি) সুরক্ষিত রাখতে হবে। কিন্তু এসব নির্দেশনা উপেক্ষা করে অনেক জায়গায় গাছের গোড়া তুলে শুধু গর্ত রেখে দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও গোড়াও ফেলে রাখা হয়েছে সড়কের ধারে।

নড়াইল সদর উপজেলার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমার ভাই কয়েক দিন আগে বাইকে করে আসার সময় একটি গর্তে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। হাত ভেঙে যায় তার। গর্তগুলো রাতে একেবারেই বোঝা যায় না।”

আরেকজন স্থানীয় ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এগুলো তো স্পষ্ট অনিয়ম। অথচ কোনো দায়িত্বশীল কেউ এসে দেখে না। গাছ তো কাটলেন, কিন্তু জনগণের জীবনঝুঁকি নিয়ে ভাবলেন না!”

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় সড়ক বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নিয়ম মেনে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিলাম। যদি কেউ শর্ত লঙ্ঘন করে থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, এটি শুধু ঠিকাদারদের নয়, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ব্যর্থতাও। সময়মতো তদারকি করলে এমন বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হতো না। তারা অবিলম্বে গর্তগুলো মাটি দিয়ে পূরণ করে ঝুঁকিমুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।

এদিকে, ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা গেছে, একাধিক জায়গায় গর্ত খোঁড়া অবস্থায় আছে। কোথাও কোথাও সেই গর্তে পানি জমেছে, যা শিশুসহ পথচারীদের জন্য চরম ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠেছে।

এখনো পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে। জনদুর্ভোগ লাঘব ও সড়ক নিরাপদ করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন এলাকাবাসী।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

সিংগারবিল ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সভা অনুষ্ঠিত

নড়াইলে সড়কের পাশে গাছ কেটে ফেলা, গোড়ার গর্তেই মরণফাঁদ

Update Time : 05:21:55 pm, Saturday, 17 May 2025

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মধুমতি সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে সদর উপজেলার গাবতলা পর্যন্ত মহাসড়কের পাশে টেন্ডারের মাধ্যমে গাছ কেটে নেওয়া হলেও চুক্তির শর্ত ভেঙে অনেক গাছের গোড়া তুলে ফেলা হয়েছে। কোথাও কোথাও সেই গোড়া অপসারণ না করে সড়কের পাশে ফেলে রাখা হয়েছে। এতে সড়কের দুই পাশে তৈরি হয়েছে গভীর গর্ত—যা এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।

এই গর্তগুলো বিশেষ করে রাতের আঁধারে ও বৃষ্টির সময় আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। ইতোমধ্যে কয়েকটি দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে, আহত হয়েছেন পথচারী ও বাইক আরোহীরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির ঘাটতির কারণেই এ ধরনের অনিয়ম ঘটছে এবং জনজীবনে বাড়ছে ঝুঁকি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, দরপত্রে উল্লেখ থাকা গাছ কাটার শর্তে বলা ছিল—গাছের গোড়া বা শিকড় মাটি থেকে উত্তোলন করা যাবে না। যদি তুলে ফেলতেই হয়, তবে সেই জায়গা মাটি দিয়ে ভরাট করে হেজিং (সবুজ প্রাচীর/গাছের সারি) সুরক্ষিত রাখতে হবে। কিন্তু এসব নির্দেশনা উপেক্ষা করে অনেক জায়গায় গাছের গোড়া তুলে শুধু গর্ত রেখে দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও গোড়াও ফেলে রাখা হয়েছে সড়কের ধারে।

নড়াইল সদর উপজেলার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমার ভাই কয়েক দিন আগে বাইকে করে আসার সময় একটি গর্তে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। হাত ভেঙে যায় তার। গর্তগুলো রাতে একেবারেই বোঝা যায় না।”

আরেকজন স্থানীয় ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এগুলো তো স্পষ্ট অনিয়ম। অথচ কোনো দায়িত্বশীল কেউ এসে দেখে না। গাছ তো কাটলেন, কিন্তু জনগণের জীবনঝুঁকি নিয়ে ভাবলেন না!”

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় সড়ক বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নিয়ম মেনে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিলাম। যদি কেউ শর্ত লঙ্ঘন করে থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, এটি শুধু ঠিকাদারদের নয়, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ব্যর্থতাও। সময়মতো তদারকি করলে এমন বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হতো না। তারা অবিলম্বে গর্তগুলো মাটি দিয়ে পূরণ করে ঝুঁকিমুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।

এদিকে, ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা গেছে, একাধিক জায়গায় গর্ত খোঁড়া অবস্থায় আছে। কোথাও কোথাও সেই গর্তে পানি জমেছে, যা শিশুসহ পথচারীদের জন্য চরম ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠেছে।

এখনো পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে। জনদুর্ভোগ লাঘব ও সড়ক নিরাপদ করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন এলাকাবাসী।