Dhaka 7:47 am, Friday, 18 July 2025

নড়াইলে শ্রমিক সংকটে পাকা ধান ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কা

উপজেলার বনগ্রামের চাষি সনাতন বিশ্বাস এ বছর তিন একর জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। ফলন ভালো হলেও ধান কাটতে না পারায় তিনি নিজেই স্ত্রীকে নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন।

তিনি বলেন, সারা বছর একটা ফসলের উপরই ভরসা। বসে থাকলে তো ধান ঘরে উঠবে না। শ্রমিক না পাওয়ায় নিজেরাই কাটা শুরু করেছি। বর্তমান মজুরি অনুযায়ী লাভ থাকছে না।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, নিচু জমিগুলোতে পানি জমে আছে, পাকা ধান ভিজে পড়ার শঙ্কা। আকাশে মাঝেমধ্যে কালো মেঘ, তার সঙ্গে শ্রমিক সংকট-সব মিলিয়ে কৃষকের দুশ্চিন্তা বেড়েছে।

নড়াইল সদর, কালিয়া ও লোহাগড়া উপজেলার বিভিন্ন মাঠেও একই চিত্র-ধান কাটার উপযোগী হলেও শ্রমিক না থাকায় জমিতেই পড়ে আছে ধান। মজুরি বাড়িয়েও মিলছে না শ্রমিক। এর মধ্যেই বৃষ্টির আভাস-এতে দুশ্চিন্তা বেড়েছে চাষিদের।

কোড়গ্রামের কৃষক পোপাল গোলদার বলেন, তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি, ফলনও ভালো। কিন্তু কাটার লোক নেই। তিন বার খেতে দিয়ে ৮০০ টাকা মজুরি দিয়ে ভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিক আনতে হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলায় ৫০ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪২ হাজার টন।

জেলার কৃষকরা অভিযোগ করছেন, উৎপাদন খরচ আগের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে। সার, সেচ, বীজ, কীটনাশক-সবকিছুর দাম বেড়েছে। ডিজেল ও বিদ্যুৎ খরচও বেড়েছে সেচনির্ভর জমিতে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে শ্রমিক সংকট ও বাড়তি মজুরি।

বাহিরগ্রামের কৃষক মো. জমিরুল ইসলাম (৫৫) বলেন, তিন বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছি। ধান ভালো হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকেরা ৮০০ টাকা মজুরি চায়। এত খরচ দিয়ে লাভ থাকছে না। কৃষি অফিস থেকে যে হারভেস্টার দেওয়ার কথা, তা কখনো আমাদের মাঠে আসেনি।

নড়াইল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, উপজেলায় হারভেস্টার মেশিন রয়েছে। তবে অনেক কৃষকের খড়ের প্রয়োজন থাকায় তারা মেশিনে ধান কাটতে চান না। এতে করে শ্রমিক সংকট প্রকট হয়। এছাড়া অনেকে কৃষিকাজ ছেড়ে ভিন্ন পেশায় চলে যাওয়ায় মৌসুমে শ্রমিকের চাহিদা বেড়ে যায় এবং মজুরি বাড়ে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বরেন্দ্র সচেতন সমাজ’র উদ্যোগে মাসব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন

নড়াইলে শ্রমিক সংকটে পাকা ধান ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কা

Update Time : 03:18:28 pm, Wednesday, 30 April 2025

উপজেলার বনগ্রামের চাষি সনাতন বিশ্বাস এ বছর তিন একর জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। ফলন ভালো হলেও ধান কাটতে না পারায় তিনি নিজেই স্ত্রীকে নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন।

তিনি বলেন, সারা বছর একটা ফসলের উপরই ভরসা। বসে থাকলে তো ধান ঘরে উঠবে না। শ্রমিক না পাওয়ায় নিজেরাই কাটা শুরু করেছি। বর্তমান মজুরি অনুযায়ী লাভ থাকছে না।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, নিচু জমিগুলোতে পানি জমে আছে, পাকা ধান ভিজে পড়ার শঙ্কা। আকাশে মাঝেমধ্যে কালো মেঘ, তার সঙ্গে শ্রমিক সংকট-সব মিলিয়ে কৃষকের দুশ্চিন্তা বেড়েছে।

নড়াইল সদর, কালিয়া ও লোহাগড়া উপজেলার বিভিন্ন মাঠেও একই চিত্র-ধান কাটার উপযোগী হলেও শ্রমিক না থাকায় জমিতেই পড়ে আছে ধান। মজুরি বাড়িয়েও মিলছে না শ্রমিক। এর মধ্যেই বৃষ্টির আভাস-এতে দুশ্চিন্তা বেড়েছে চাষিদের।

কোড়গ্রামের কৃষক পোপাল গোলদার বলেন, তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি, ফলনও ভালো। কিন্তু কাটার লোক নেই। তিন বার খেতে দিয়ে ৮০০ টাকা মজুরি দিয়ে ভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিক আনতে হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলায় ৫০ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪২ হাজার টন।

জেলার কৃষকরা অভিযোগ করছেন, উৎপাদন খরচ আগের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে। সার, সেচ, বীজ, কীটনাশক-সবকিছুর দাম বেড়েছে। ডিজেল ও বিদ্যুৎ খরচও বেড়েছে সেচনির্ভর জমিতে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে শ্রমিক সংকট ও বাড়তি মজুরি।

বাহিরগ্রামের কৃষক মো. জমিরুল ইসলাম (৫৫) বলেন, তিন বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছি। ধান ভালো হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকেরা ৮০০ টাকা মজুরি চায়। এত খরচ দিয়ে লাভ থাকছে না। কৃষি অফিস থেকে যে হারভেস্টার দেওয়ার কথা, তা কখনো আমাদের মাঠে আসেনি।

নড়াইল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, উপজেলায় হারভেস্টার মেশিন রয়েছে। তবে অনেক কৃষকের খড়ের প্রয়োজন থাকায় তারা মেশিনে ধান কাটতে চান না। এতে করে শ্রমিক সংকট প্রকট হয়। এছাড়া অনেকে কৃষিকাজ ছেড়ে ভিন্ন পেশায় চলে যাওয়ায় মৌসুমে শ্রমিকের চাহিদা বেড়ে যায় এবং মজুরি বাড়ে।