
নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার ১১নং ইতনা ইউনিয়নের দৌলতপুর রাধানগর এলাকায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী “বাবা বুড়ো ঠাকুরের হীজল গাছতলায়” চার দিনব্যাপী মেলা শুরু হতে যাচ্ছে ২২ এপ্রিল। প্রতি বছর বৈশাখ মাসের প্রথম বা দ্বিতীয় মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়ে চার দিনব্যাপী চলে এই মেলা উৎসব। এবার বৈশাখের দ্বিতীয় মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে মেলা, চলবে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত।
স্থানীয়দের বিশ্বাস ও শতবর্ষের লোককথা অনুযায়ী, এখানে মানত করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়। পুরনো দিনের কথিত আছে, কেউ যদি মানত করত, তবে কিছু কাঁচা দুধ ও খুচরা পয়সা গাছতলায় রেখে যেত। স্থানীয়দের মুখে প্রচলিত আছে যে, তৎকালীন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব রাণী রাসমণিও একাধিকবার এখানে এসেছিলেন এবং গাছতলায় বসে একাকী সময় কাটিয়েছেন।
গাছতলায় এখন সারাবছর পূজা অর্চনা চলে। তবে বিশেষ করে শনিবার ও মঙ্গলবার ভক্তদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। প্রতি বছরই হাজার হাজার ভক্তবৃন্দ বিভিন্ন এলাকা থেকে এই পূজায় অংশ নিতে আসেন, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অংশগ্রহণ করেন সকলে।
বাবা বুড়ো ঠাকুরের আগমন এখানে আনুমানিক ৪০০ থেকে ৪৫০ বছর আগের ঘটনা বলে জানা যায়। গাছতলায় প্রথম পূজার প্রবর্তক ছিলেন বাবু তমাল কৃষ্ণ কুন্ডু। বহু বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী এ পূজা পরিচালনায় ছিলেন বারবার নির্বাচিত সভাপতি বাবু গোপাল চন্দ্র সাহা। বর্তমানে পূজার সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন তাঁরই পুত্র বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সমাজসেবক এবং অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো আলোক কুমার সাহা। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন বাবু উজ্জ্বল গাঙ্গুলী।
নড়াইলের ইতনা ইউনিয়নের স্থানীয় প্রতিনিধি পাপন কুন্ডুর তথ্যসূত্রে জানা গেছে, এবারের পূজায় থাকছে নানা ধরনের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে পদাবলী কীর্তন, গীতা যজ্ঞ, কবিগান ইত্যাদি। প্রতিবারের মতো এবারও পূজার পাশাপাশি মেলাও অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি থাকবে।
২০ বছর ধরে এই মেলা স্থানীয়ভাবে শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। পহেলা বৈশাখ যদি মঙ্গলবার পড়ে, তবে মেলা শুরু হয় বৈশাখের দ্বিতীয় মঙ্গলবার থেকে। এবারের মেলাও সেই নিয়মে আয়োজিত হচ্ছে।
উপস্থিত হাজারো ভক্ত, দর্শনার্থী ও মেলার ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সার্বিক সমন্বয় রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আয়োজক কমিটি।