Dhaka 3:34 am, Friday, 18 July 2025

নাগরপুরে বিলুপ্ত গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য গরু দিয়ে হালচাষ

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। বেশির ভাগ মানুষের পেশা কৃষি। কৃষির উপর নির্ভর করে চলে এ দেশের অর্থনীতি। একসময় গরু দিয়ে এ দেশে হালচাষ করা হতো। কিন্তু প্রযুক্তির আধুনিকতার ছোঁয়ায় পালটে গেছে চিত্র। দিনদিন নতুন যন্ত্র আবিষ্কারের ফলে দেশ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী বাঙালির চিরচেনা সেই গরুর কাঁধে জোয়াল-লাঙল দিয়ে জমি চাষের চিত্র। যান্ত্রিক ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করায় গরুর হাল চাষ এখন বিলুপ্ত প্রায়। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত

টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলায়ও একসময় গরু-লাঙলে জমি চাষ আর মই দেওয়ার দৃশ্য সবার নজর কাড়তো। বাড়ি থেকে বের হয়ে মাঠের দিকে নজর পড়তেই দেখা যেত শত শত কৃষক বাঁশ/লোহার ফালা দিয়ে তৈরি ধারালো লাঙল কাঠের হাতল আর জোয়ালের মাধ্যমে গরুর কাঁধে বেঁধে জমি চাষ করছে। সে সময় গরু-লাঙল ছাড়া জমি চাষ করার কথা চিন্তাাই করা যেত না। অথচ গরু-লাঙলের সঙ্গে কৃষকের সেই দৃশ্য এখন বিরল।

যুগের পরিবর্তন আর বিজ্ঞানের ক্রমাগত উন্নতির কারণে গরু-লাঙলের স্থান দখল করে নিয়েছে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলারসহ বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি। কৃষক এখন তার সুবিধা মতো দিনের যে কোনো সময় ট্রাক্টর বা পাওয়ার টিলার নিয়ে মাঠে গিয়ে অল্প সময়ে প্রয়োজনীয় জমি চাষ এবং মই দিয়ে ফসল আবাদ করছে। তবে ওই ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষে পরিশ্রম এবং সময় কমেছে সত্য, কিন্তু ফসলের গুণগতমান ও স্বাদ কমে গেছে এবং জমির উর্বরতাও হ্রাস পাচ্ছে।

একাধিক প্রবীণ কৃষক জানান, গরু-লাঙল দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪০ শতাংশ জমি চাষ করা সম্ভব। আধুনিক যন্ত্রপাতির থেকে গরু-লাঙলের চাষ গভীর হওয়ায় জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। এ পদ্ধতির চাষ, সার ও কীটনাশকের জন্য সাশ্রয় হয়। কষ্ট হলেও আমাদের গরু দিয়ে হালচাষ করতে খুব ভালো লাগত। বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির আবির্ভাবের কারণে এভাবেই ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে আমাদের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। আগামী প্রজন্ম বই পড়ে জানতে পারবে একসময় গ্রামাঞ্চলে গরু দিয়ে হালচাষের বিষয়।

উপজেলার ঘিওরকোল গ্রামের সন্তেষ আলী তালুকদার(৬৫) জানান, একটা সময় আমাদের বাড়ি হতে ভোরবেলা একসাথে ৪-৬ টি হাল বের হতো জমি চাষের জন্য। পাশাপাশি আবাদি শষ্য এবং পণ্যবহনের জন্য ছিল গরুর গাড়ি। ৭১ পরবর্তী ৯০ দশক পর্যন্ত দাদা মরহুম কফিল উদ্দিন তালুকদারের ছিল প্রায় সাড়ে তিন খাদা সম্পদ।

উপজেলার প্রায় ৯টি মৌজায় দাদার আবাদি ও অনাবাদি জমি ছিল। তবে বেশিরভাগ আবাদি জমি ছিল, ঘিওরকোল, কলিয়া, পুগলি ও দুয়াজানি মৌজায়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস. এম রাশেদুল হাসান বলেন, যদিও যান্ত্রিক চাষে উৎপাদন দ্রুত হয়, তবু প্রাকৃতিক পদ্ধতির উপকারিতা উপেক্ষা করা যায় না। গরু দিয়ে চাষ করলে মাটির গভীর অংশ আলগা হয়, গরুর পায়ের চাপে কাদা তৈরি হয় এবং গোবর জমির উর্বরতা বাড়ায়। এ ছাড়া গরু ও লাঙলে জমির আইলের পাশের জায়গাটাও ভালোভাবে চাষ করা যায়, যা ট্রাক্টর দিয়ে সম্ভব নয়। জমির কোণা গুলো ফাঁকা থাকলেও গরু-লাঙল দিয়ে চাষ করলে তা পূরণ করা সম্ভব। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের এই ঐতিহ্য।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বরেন্দ্র সচেতন সমাজ’র উদ্যোগে মাসব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন

নাগরপুরে বিলুপ্ত গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য গরু দিয়ে হালচাষ

Update Time : 10:03:16 pm, Sunday, 16 March 2025

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। বেশির ভাগ মানুষের পেশা কৃষি। কৃষির উপর নির্ভর করে চলে এ দেশের অর্থনীতি। একসময় গরু দিয়ে এ দেশে হালচাষ করা হতো। কিন্তু প্রযুক্তির আধুনিকতার ছোঁয়ায় পালটে গেছে চিত্র। দিনদিন নতুন যন্ত্র আবিষ্কারের ফলে দেশ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী বাঙালির চিরচেনা সেই গরুর কাঁধে জোয়াল-লাঙল দিয়ে জমি চাষের চিত্র। যান্ত্রিক ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করায় গরুর হাল চাষ এখন বিলুপ্ত প্রায়। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত

টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলায়ও একসময় গরু-লাঙলে জমি চাষ আর মই দেওয়ার দৃশ্য সবার নজর কাড়তো। বাড়ি থেকে বের হয়ে মাঠের দিকে নজর পড়তেই দেখা যেত শত শত কৃষক বাঁশ/লোহার ফালা দিয়ে তৈরি ধারালো লাঙল কাঠের হাতল আর জোয়ালের মাধ্যমে গরুর কাঁধে বেঁধে জমি চাষ করছে। সে সময় গরু-লাঙল ছাড়া জমি চাষ করার কথা চিন্তাাই করা যেত না। অথচ গরু-লাঙলের সঙ্গে কৃষকের সেই দৃশ্য এখন বিরল।

যুগের পরিবর্তন আর বিজ্ঞানের ক্রমাগত উন্নতির কারণে গরু-লাঙলের স্থান দখল করে নিয়েছে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলারসহ বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি। কৃষক এখন তার সুবিধা মতো দিনের যে কোনো সময় ট্রাক্টর বা পাওয়ার টিলার নিয়ে মাঠে গিয়ে অল্প সময়ে প্রয়োজনীয় জমি চাষ এবং মই দিয়ে ফসল আবাদ করছে। তবে ওই ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষে পরিশ্রম এবং সময় কমেছে সত্য, কিন্তু ফসলের গুণগতমান ও স্বাদ কমে গেছে এবং জমির উর্বরতাও হ্রাস পাচ্ছে।

একাধিক প্রবীণ কৃষক জানান, গরু-লাঙল দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪০ শতাংশ জমি চাষ করা সম্ভব। আধুনিক যন্ত্রপাতির থেকে গরু-লাঙলের চাষ গভীর হওয়ায় জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। এ পদ্ধতির চাষ, সার ও কীটনাশকের জন্য সাশ্রয় হয়। কষ্ট হলেও আমাদের গরু দিয়ে হালচাষ করতে খুব ভালো লাগত। বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির আবির্ভাবের কারণে এভাবেই ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে আমাদের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। আগামী প্রজন্ম বই পড়ে জানতে পারবে একসময় গ্রামাঞ্চলে গরু দিয়ে হালচাষের বিষয়।

উপজেলার ঘিওরকোল গ্রামের সন্তেষ আলী তালুকদার(৬৫) জানান, একটা সময় আমাদের বাড়ি হতে ভোরবেলা একসাথে ৪-৬ টি হাল বের হতো জমি চাষের জন্য। পাশাপাশি আবাদি শষ্য এবং পণ্যবহনের জন্য ছিল গরুর গাড়ি। ৭১ পরবর্তী ৯০ দশক পর্যন্ত দাদা মরহুম কফিল উদ্দিন তালুকদারের ছিল প্রায় সাড়ে তিন খাদা সম্পদ।

উপজেলার প্রায় ৯টি মৌজায় দাদার আবাদি ও অনাবাদি জমি ছিল। তবে বেশিরভাগ আবাদি জমি ছিল, ঘিওরকোল, কলিয়া, পুগলি ও দুয়াজানি মৌজায়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস. এম রাশেদুল হাসান বলেন, যদিও যান্ত্রিক চাষে উৎপাদন দ্রুত হয়, তবু প্রাকৃতিক পদ্ধতির উপকারিতা উপেক্ষা করা যায় না। গরু দিয়ে চাষ করলে মাটির গভীর অংশ আলগা হয়, গরুর পায়ের চাপে কাদা তৈরি হয় এবং গোবর জমির উর্বরতা বাড়ায়। এ ছাড়া গরু ও লাঙলে জমির আইলের পাশের জায়গাটাও ভালোভাবে চাষ করা যায়, যা ট্রাক্টর দিয়ে সম্ভব নয়। জমির কোণা গুলো ফাঁকা থাকলেও গরু-লাঙল দিয়ে চাষ করলে তা পূরণ করা সম্ভব। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের এই ঐতিহ্য।