Dhaka 3:58 am, Monday, 8 December 2025

শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও তিন দফা দাবিতে নাগরপুরে চলছে কর্মবিরতি

ঢাকায় আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদ এবং তিন দফা দাবিতে সারাদেশের মতো টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলাতেও শুরু হয়েছে স্কুল,কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি।

কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার (১৩ অক্টোবর’২৫) সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা শ্রেণিকক্ষে না গিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। হাতে ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে শিক্ষকরা দাবি আদায়ে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তারা জানান,শিক্ষক সমাজের ওপর একের পর এক হামলা ও অবমূল্যায়নের প্রতিবাদ এবং দাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনই এখন তাদের একমাত্র পথ।

শিক্ষকদের তিন দফা দাবির মধ্যে রয়েছে ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধি, কর্মচারীদের ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতা প্রদান এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য ১,৫০০ টাকা হারে চিকিৎসা ভাতা চালু করা।

কবি নজরুল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন,আমরা শ্রেণিকক্ষে নয়, আজ রাজপথে। কারণ আমাদের সহকর্মীরা যেভাবে লাঞ্ছিত হচ্ছেন, তাতে নীরব থাকা সম্ভব নয়। আমরা শিক্ষাদানের পবিত্র দায়িত্ব পালন করি, অথচ আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই, মানসম্মত বেতন-ভাতা নেই। সরকারের নিকট দ্রুত দাবি পূরণের আহ্বান জানাই।

নাগরপুরের এক আলিম মাদ্রাসা শিক্ষক মো.ইমরান হোসাইন বলেন,শিক্ষকদের উপর হামলার দোষীদের বিচার চাই এই আন্দোলন শুধু আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য নয়, এটি একটি সম্মান রক্ষার আন্দোলন। আমরা চাই, শিক্ষক সমাজের মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক।

শিক্ষার্থীরাও শিক্ষক-কর্মবিরতির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছে। নাগরপুরের এক স্কুলের শিক্ষার্থী বলেন, স্যাররা ক্লাস নিচ্ছেন না, তাই পড়ালেখায় সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু আমরা জানি তারা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য লড়ছেন। আমরা শিক্ষার্থীরা তাদের পাশে আছি।”

অপর এক কলেজছাত্রী বলেন, “আমাদের ক্লাস বন্ধ থাকলেও আমি মনে করি শিক্ষকদের দাবি ন্যায্য। শিক্ষকরা নিরাপদ না থাকলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হবে। দ্রুত শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।

কর্মবিরতি বিষয়ে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি, নাগরপুর উপজেলা শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ মো. আনিসুর রহমান বলেন, শিক্ষকদের দাবি আদায়ের যে কর্মবিরতি চলছে, তার সঙ্গে আমাদের সংগঠনের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। শিক্ষকদের ওপর হামলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। দোষীদের দ্রুত বিচার করতে হবে। এখন শুধু ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া নয়, আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিও জানাচ্ছি।”

এদিকে, কর্মবিরতির কারণে উপজেলার প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিষয়টিকে উদ্বেগের সঙ্গে দেখছেন। তবে শিক্ষকরা জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন এবং প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচির দিকে যেতে বাধ্য হবেন।

উল্লেখ্য, রোববার বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক অবস্থান কর্মসূচি থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের পক্ষ থেকে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন সংগঠনের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী। এসময় তিনি বলেন, “জনদুর্ভোগ এড়াতে আমরা শহীদ মিনারেই অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছি। প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকেই আন্দোলন চলবে। আলোচনার মাধ্যমে, সহযোগিতার মাধ্যমে প্রজ্ঞাপন নিয়েই বিজয়ী বেশে আমরা শ্রেণিকক্ষে ফিরব, ইনশাআল্লাহ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

টাঙ্গাইল-আরিচা আঞ্চলিক সড়কের কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন

শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও তিন দফা দাবিতে নাগরপুরে চলছে কর্মবিরতি

Update Time : 10:25:43 pm, Monday, 13 October 2025

ঢাকায় আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদ এবং তিন দফা দাবিতে সারাদেশের মতো টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলাতেও শুরু হয়েছে স্কুল,কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি।

কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার (১৩ অক্টোবর’২৫) সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা শ্রেণিকক্ষে না গিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। হাতে ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে শিক্ষকরা দাবি আদায়ে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তারা জানান,শিক্ষক সমাজের ওপর একের পর এক হামলা ও অবমূল্যায়নের প্রতিবাদ এবং দাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনই এখন তাদের একমাত্র পথ।

শিক্ষকদের তিন দফা দাবির মধ্যে রয়েছে ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধি, কর্মচারীদের ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতা প্রদান এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য ১,৫০০ টাকা হারে চিকিৎসা ভাতা চালু করা।

কবি নজরুল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন,আমরা শ্রেণিকক্ষে নয়, আজ রাজপথে। কারণ আমাদের সহকর্মীরা যেভাবে লাঞ্ছিত হচ্ছেন, তাতে নীরব থাকা সম্ভব নয়। আমরা শিক্ষাদানের পবিত্র দায়িত্ব পালন করি, অথচ আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই, মানসম্মত বেতন-ভাতা নেই। সরকারের নিকট দ্রুত দাবি পূরণের আহ্বান জানাই।

নাগরপুরের এক আলিম মাদ্রাসা শিক্ষক মো.ইমরান হোসাইন বলেন,শিক্ষকদের উপর হামলার দোষীদের বিচার চাই এই আন্দোলন শুধু আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য নয়, এটি একটি সম্মান রক্ষার আন্দোলন। আমরা চাই, শিক্ষক সমাজের মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক।

শিক্ষার্থীরাও শিক্ষক-কর্মবিরতির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছে। নাগরপুরের এক স্কুলের শিক্ষার্থী বলেন, স্যাররা ক্লাস নিচ্ছেন না, তাই পড়ালেখায় সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু আমরা জানি তারা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য লড়ছেন। আমরা শিক্ষার্থীরা তাদের পাশে আছি।”

অপর এক কলেজছাত্রী বলেন, “আমাদের ক্লাস বন্ধ থাকলেও আমি মনে করি শিক্ষকদের দাবি ন্যায্য। শিক্ষকরা নিরাপদ না থাকলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হবে। দ্রুত শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।

কর্মবিরতি বিষয়ে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি, নাগরপুর উপজেলা শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ মো. আনিসুর রহমান বলেন, শিক্ষকদের দাবি আদায়ের যে কর্মবিরতি চলছে, তার সঙ্গে আমাদের সংগঠনের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। শিক্ষকদের ওপর হামলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। দোষীদের দ্রুত বিচার করতে হবে। এখন শুধু ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া নয়, আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিও জানাচ্ছি।”

এদিকে, কর্মবিরতির কারণে উপজেলার প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিষয়টিকে উদ্বেগের সঙ্গে দেখছেন। তবে শিক্ষকরা জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন এবং প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচির দিকে যেতে বাধ্য হবেন।

উল্লেখ্য, রোববার বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক অবস্থান কর্মসূচি থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের পক্ষ থেকে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন সংগঠনের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী। এসময় তিনি বলেন, “জনদুর্ভোগ এড়াতে আমরা শহীদ মিনারেই অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছি। প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকেই আন্দোলন চলবে। আলোচনার মাধ্যমে, সহযোগিতার মাধ্যমে প্রজ্ঞাপন নিয়েই বিজয়ী বেশে আমরা শ্রেণিকক্ষে ফিরব, ইনশাআল্লাহ।